ফরিদপুরের সদরপুরে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে তালশাঁস বিক্রির ধুম পড়েছে। পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে তালের রস ও ডাব। তবে তালের রস ও ডাবের চেয়ে এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে তালশাঁস। তিব্র গরমে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করছে বলে মনে করছেন অনেকে। আবার সারা বছর তালশাঁস খাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন অনেকেই।
সরেজমিনে ঘুরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তালের শাঁস বিক্রি করতে দেখা গেছে। ভ্যানে করেও ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন তালশাঁস। দিনে রোদের তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে তালের শাঁসের চাহিদাও। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে বিক্রি। গ্রীষ্মের অসহনীয় গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও তৃষ্ণায় স্বস্তি এনে দিচ্ছে কঁচি তালের শাঁস। আবার অনেকেই বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন রসালো এ ফল। সুস্বাদু ফল হিসেবে তালশাঁস খেলেও আমরা জানিনা এর পুষ্টিগুণ।এই বিষয়ে কথা হয় সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার  ডাঃ গোলাম রাব্বানীর সাথে। তিনি জানান, সুস্বাদু তালশাঁস একটি ভিটামিন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ শরীরে পানিশূন্যতা  দূর করে। ফলটিতে রয়েছে ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স যা শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারি। ভিটামিন এ, যা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করতে সাহায্য করে।প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। অনেক সময়ে অ্যাসিডিটির ফলে বমিভাব হয় এবং খাবার বিস্বাদ লাগে। কঁচি তালের শাঁস এই বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে খাবারে অরুচি-ভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আপনার যদি অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা থেকে থাকে, তাহলে তা দূর করতে খান কঁচি তালের শাঁস। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ত্বককে সুন্দর, উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় করে তুলতে নিয়ম করে খান তালের শাঁস।তালশাঁস বিক্রেতা সেখ ইউনুস জানান, প্রতিটি গাছ সিজন চুক্তিতে আমরা কিনে থাকি ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় আবার ২ থেকে ৩ ছাজার টাকা গাছ বুঝে কিনে থাকি। তালের ফলন ভালো হলে, চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হয়। তালশাঁস এখন থেকে বিক্রি শুরু করেছি যা চলবে শাঁস  শক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত। বর্তমানে শাঁসের চাহিদা ব্যাপক সেই মাফিক যোগান দিতে পারছি না। অধিকাংশ শাঁস পরিপূর্ন হয়নি। প্রতি পিস তালশাঁস ১৫ থেকে ২০ টাকা করে বিক্রি করছি। তবে কেউ একসাথে অনেক গুলো নিলে কম নিচ্ছি।ক্রেতা তানজিল আহমেদ তমাল বলেন, এই বছরের প্রথম তালশাঁস খেলাম। তবে আর কিছুদিন পরে এর থেকেও ভালো মানের পাওয়া যাবে। তালশাঁস খেয়ে এই তীব্র গরমে একটু স্বস্তি মিলছে। তবে ফলটির দাম তুলনামূলক একটু বেশি। তালশাঁস আমার অত্যন্ত প্রিয়। প্রায় প্রতিদিন বাজার থেকে অল্প করে কিনে থাকি।গরমে তালশাঁস খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে ইন্টারনেট ঘেটে জানাযায়, গ্রীষ্মের ফলের মধ্যে তালশাঁস অন্যতম। এটি গ্রীষ্মকালীন সুপারফুড হিসাবে পরিচিত। সুস্বাদু স্বাদের এই ফলটি স্বাস্থ্যের জন্যও সমান উপকারী। তালশাঁসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে এর মতো পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এটি খাওয়ার সাথে সাথেই শরীর হাইড্রেটেড হয়। আবার পেটও ঠান্ডা হয়ে যায়। প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তি পেতে এই ফলটি ভালো কাজ করে। প্রচণ্ড তাপদাহে শরীর গরম হতে শুরু করে। এর ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে তালের শাঁস খেলে তাৎক্ষণিক শরীর হাইড্রেট হয়। ডিহাইড্রেশন থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এই ফলটি কাজ করে। প্রচণ্ড গরমে অনেকেই পেটের সমস্যায় ভোগেন। তালশাঁস খেলে পেট তাৎক্ষণিকভাবে ঠান্ডা হয়। এটি খেলে পরিপাকতন্ত্র শক্তিশালী হয়। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম এবং গ্যাসের সমস্যা কমে। দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণে মানুষ খুব দ্রুত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ তালশাঁস খাওয়া উচিত। দুর্বল বিপাকক্রিয়ার কারণে ওজন বাড়তে থাকে এবং মানুষ স্থূলতার শিকার হয়। ফাইবার সমৃদ্ধ এই ফলটি খেলে বিপাকক্রিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, এটি খেলে দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা অনুভূত হয় না।

তালশাঁস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম, যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।

এক্সক্লুসিভ রিলেটেড নিউজ

সর্বশেষ